আমাদের
গল্প

চিত্তরঞ্জন সাহা
প্রতিষ্ঠাতা, মুক্তধারা ও পুথিঘর লিঃ
১৯৭১ সনের ২৮ মে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন কলকাতার পার্ক সার্কাসের পাম এভিনিউতে অবস্থিত অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসানের অস্থায়ী বাসায় মুক্তধারার জন্ম।
তৎকালে চিত্তরঞ্জন সাহা ছিলেন বিশিষ্ট প্রকাশনী সংস্থা পুথিঘর লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যাবস্থাপনা পরিচালক। দেশের শিক্ষা সংস্কৃতির বিস্তারে বিশিষ্ট প্রকাশক হিসেবে তাঁর পরিচিতি তখন শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিদদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকার ৭৪ নম্বর ফরাশগঞ্জে ঢাকার প্রথম জমিদার বাড়িতে ছিলো পুথিঘর লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়। পুরো ২৩ কাঠা জায়গার উপর ছিলো তাঁর বিশাল প্রকাশনা সংস্থা। একই বাড়িতে ছিল তাঁর অফিস, ছাপাখানা, বাঁধাইখানা এবং তাঁর পরিবারের বাসস্থান। ঢাকা শহরে তখন কেন, আজও এতো বিশাল আকারের কোনো প্রকাশনা সংস্থা গড়ে ওঠেনি।
১৯৭১ সনে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন দেশের অনেক বরেণ্য শিল্পী , সাহিত্যিক , বুদ্ধিজীবী , সাংবাদিক সহ লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় গ্রহণ করে। ২৬শে মার্চের পাকিস্থানী বাহিনীর নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পর চিত্তরঞ্জন সাহাও শূন্য হাতে তাঁর বিশাল ব্যবসা প্রতিষ্টান ছেড়ে প্রাণের ভয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে ভারতের কলকাতায় আশ্রয় গ্রহণ করেন।
দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার জন্য চিত্তরঞ্জন সাহা তখন কলকাতায় শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে প্রথম স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ গঠন করেন। এই পরিষদের মতামতের ভিত্তিতে তখন কলকাতায় জন্ম হয় "মুক্তধারা" প্রকাশনা প্রতিষ্টানটির। দীর্ঘ নয় মাস কোলকাতায় অবস্থান কালে দেশের বরেণ্য সাহিত্যিকদের দ্বারা রচিত তেত্রিশ খানা বই প্রকাশ করে মুক্তধারা।
অধিকাংশ বই ই মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রচিত হয়েছিল। প্রথম প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আহমদ ছফা রচিত জাগ্রত বাংলাদেশ, অধ্যাপক আবু সায়ীদ রচিত বাংলাদেশের গেরিলা যুদ্ধ, বরেণ্য সাংবাদিক সত্যেনসেনের মসলার যুদ্ধ , পাপের সন্তান, মহাবিদ্রোহের কাহিনী ; রামেন্দু মজুমদারের Bangladesh my Bangladesh । এছাড়াও ছিলেন বরেণ্য সাংবাদিক রণেশ দাস গুপ্ত। সাড়া জাগানো বই রক্তাক্ত বাংলা তখন মুক্তধারা থেকেই প্রকাশিত হয়। শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন নীতুন কুন্ড, দেবনাথ চক্রবর্তী সহ আরো অনেকে।
স্বাধীনতার পর পরই চিত্তরঞ্জন সাহা মুক্তধারা থেকে প্রকাশিত সেই তেত্রিশ খানা বই ও ছাপানোর ফরম্যাট নিয়ে দেশে ফিরে আসেন।
একুশে বই মেলার কথাঃ
১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমী কর্তৃক আয়োজিত "একুশের" অনুষ্ঠানে মুক্তধারা তার তেত্রিশ খানা বই বাংলা একাডেমী চত্তরের মধ্যে চট বিছিয়ে প্রদর্শনী ও বিক্রয় এর ব্যবস্থা করে। এই কাজে তাঁকে সর্বোত ভাবে সহযোগীতা করেন বর্তমান পুথিঘর লিঃ ও মুক্তধারার ব্যাবস্থাপনা পরিচালক শ্রী জহর লাল সাহা। তিনি পর্দার অন্তরালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন কোলকাতা থেকে মুক্তধারার বই প্রকাশের সাথেও যুক্ত ছিলেন।

১৯৭৪ সালে জহর লাল সাহা , চিত্তরঞ্জন সাহার নির্দেশে ২১শে উপলক্ষে বাংলা একাডেমী কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠান মালার সাথে সঙ্গতি রেখে প্রথম বাংলা একাডেমীর ভেতরে ছোট একটি বইয়ের ষ্টল স্থাপন করে মুক্তধারার বই প্রদর্শনী ও বিক্রয় এর ব্যবস্থা করে একক ২১শে বই মেলার সূচনা করেন। সেখান থেকেই আজকের বিশাল একুশে বই মেলার সূচনা। এভাবেই চিত্তরঞ্জন সাহা বাংলা একাডেমিতে একুশে বই মেলার প্রবর্তক হিসাবে সর্বজন স্বীকৃতি লাভ করেন। বাংলাদেশে শিক্ষা বিস্তার ও প্রকাশনা শিল্পে অগ্রণী ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ , ২০০৫ সালে তিনি রাষ্ট্রীয় ভাবে একুশে পদকে ভূষিত হন।
মুক্তধারা থেকে এখন পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১১১৩ এর উপরে। বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রে মুক্তধারার রয়েছে অসংখ্য বই। মুক্তিযুদ্ধ , রাজনীতি , গবেষণা ধর্মী , বিজ্ঞান , ইতিহাস , প্রবন্ধ , নাটক , বরেণ্য ব্যক্তিত্ব , রান্নার বই , উপন্যাস , শিশু সাহিত্য, এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য। মুক্তধারাকে আধুনিকরণে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন মুক্তধারার প্রয়াত নির্বাহী পরিচালক সজীব সাহা। তিঁনি মুক্তধারাকে পরিচালনার পাশা পাশি ব্যাক্তিগত জীবনে ছিলেন শিশু সাহিত্যিক ও লেখক। মুক্তধারা ও অন্যান্য প্রকাশনী থেকে তাঁর বই প্রকাশিত হয়েছে।

জহর লাল সাহা
ব্যাবস্থাপনা পরিচালক, মুক্তধারা ও পুথ িঘর লিঃ
মুক্তধারা প্রথম থেকেই মান সম্মত বই প্রকাশে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। আমরা বিশ্বাস করি একটি উন্নত দেশ ও জাতি গঠনে বইয়ের ভূমিকা অপরিহার্য। সেই লক্ষকে সামনে রেখে মুক্তধারা মান সমুন্নত রেখেও বইয়ের দাম যথা সম্ভব কম রাখার চেষ্টা করে। মুক্তধারার দীর্ঘ কর্ম যাত্রায় সহযাত্রী সকল লেখক, পাঠক, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, উপদেষ্টা মন্ডলী, শুভাকাঙ্খী , প্রিন্টার , বাঁধাই কারক ও বই বিক্রেতা দের আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা। আমাদের পাঠকরাই আমাদের অনুপ্রেরণা। আগামীতে পাঠকদের আরো নতুন নতুন বই উপহার দিতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।